নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের নিকট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খাজাঞ্চী ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধরের বিরুদ্ধে রাস্তা পাকাকরণের নামে টাকা আত্মসাৎ, মাদক ব্যবসা ও হত্যা চেষ্টাসহ নানা গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার এবং শোকজ হয়েছেন একই শাখার সভাপতি আবদুন নুর। গতকাল শনিবার (১৪ অক্টোবর) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদের সাক্ষরে তাকে এই সাময়িক বহিস্কার ও শোকজ করা হয়। আজ রবিবার (১৫ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আসাদুজ্জামান।
সাময়িক বহিস্কার ও শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুন নুর তার বাড়িতে দলছুট ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী তথাকথিত আওয়ামী লীগ নামধারী মেয়র মুহিবুর রহমানের ‘মেয়র মুহিবুর রহমান’ নামের ফেসবুক পেজে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং গঠনতন্ত্র অমান্য করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেন। যে কারণে তাকে দলীয় পদবী থেকে সাময়িক বহিস্কার ও কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন তার বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না-আগামি পনের দিনের মধ্যে তার জবাব দিতেও নোটিশে বলা হয়।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাতে বিশ্বনাথের পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান তার ‘মেয়র মুহিবুর রহমান’ নামের ফেসবুক পেজে ‘মেয়রকে বলুন সেবার ইনবক্সের তথ্যমতে খাজাঞ্চী ইউনিয়নের ভোলাগঞ্জ-হামদরচক রাস্তা পাকাকরণের নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা আত্মসাৎ তদন্তে’ শিরোনামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিওর একটি অংশে খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুন নুরের বাসভবনে বসে মেয়র মুহিবুর রহমান ওই রাস্তা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের দুর্দশা তো লাঘব হল না। হাটু পরিমাণ কাদা দেখে আসলাম। রাস্তা দিয়ে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। অধিকন্তু, এই রাস্তা করে দেবেন বলে নেতারা টাকা (চাঁদা) তুলে সেগুলো খেয়ে ফেলেছেন। এটা দেখার জন্যে আমরা এসেছি। এখানে আমরা একটি নাম পেয়েছি। আরেকটি নাম পাইনি। শংকর চন্দ্র ধরের নাম এখানে এসেছে যে, তিনি দেড় লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন। এটা তদন্ত করে দেখা দরকার। আমার কিছুটা বিশ্বাসও হয়, তিনিতো মুহুরী, মানুষের গলা কাটেন। একটা বাটোয়ারার দলিলে যেখানে আমার দলিল, খরচ হওয়ার কথা ১৫ হাজার সর্বোচ্চ হলে ২০ হাজার, সেখানে তিনি আমার ভাইদের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৭০ টাকা মেরে দিয়েছেন।’ এরপর আবদুন নুর বলেন, ‘ওই টাকা (দেড় লক্ষ) শংকর চন্দ্র ধর নিয়েছে। পরে অসিতের (এমপির এপিএস) মাধ্যমে মোকাব্বিরের (এমপি) কাছে দেওয়া হয়েছে। একমাত্র শংকরের কারণে আমি পারিবারিকভাবে খুবই সমস্যায় আছি। আমার পরিবার থেকে সে ৪০ লাখ টাকা খেয়েছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্যে নিয়েছে ১০ লাখ টাকা। সে জন্যে আমাকে তিনবার আক্রমণও করা হয়েছে। শংকরের মত খুনি আর মাদক ব্যবসায়ী এই ইউনিয়নে এমনকি এই বিশ্বনাথে আর নেই।’ এ সময় মেয়র বলেন, আমরা শোনেছি সে চিনি ব্যবসায়ী। প্রতি উত্তরে আবদুন নুর বলেন, ‘সে মাদক ব্যবসাসহ সবকিছুর সাথে জড়িত।’ মেয়র আবারও বলেন, ‘সে (শংকর) ইয়াবাও বিক্রি করে।’ এ সময় আবদুন নুর বলেন, ‘সেতো আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী নয়, সে শংকর লীগের সেক্রেটারী।’
খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শংকর চন্দ্র ধর বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।’
কথা হলে খাজাঞ্চী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য সাময়িক বহিস্কৃত সভাপতি আবদুন নুর বলেন, ‘আমি এখনো কোনো নোটিশ পাইনি।’