Search

এলাকাবাসির ভালবাসায় সিক্ত হলেন বিশ্বনাথের যুব সংগঠক আব্দুল মুমিন কালু

নিজস্ব প্রতিবেদক :: স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উজ্জ্বল আলো ঝলমলে জীবনে যাত্রা করার আগে নিজের জনমাটির মানুষদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বিশিষ্ট যুব সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মুমিন কালু। গতকাল রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে তাঁর নিজ গ্রাম দৌলতপুর গ্রামবাসির ব্যানারে এলাকাবাসি স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে তাকে প্রদান করেন আনুষ্ঠানিক ‘বিদায় সংবর্ধনা’।

অনুষ্ঠানে শুধু তাকে নয়, তাঁর সাথে সংবর্ধিত করা হয় জনমমাটির সাথে তাঁর গভীর ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককেও। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, এলাকাবাসী তাঁকে শুধু বিদায় জানাতে আসেননি, এসেছেন কৃতজ্ঞতার ঋণে বাঁধতে।

দৌলতপুর গ্রামবাসীর এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে বক্তাদের কথাগুলো যেন ছিল হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এক একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য। ​গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আযম আলী মেম্বারের সভাপতিত্বে দৌলতপুর যুব সমাজের সদস্য সচিব আবু তাহের সাগরের সঞ্চালনায় যখন আলোচনা শুরু হলো, তখন বক্তারা প্রচলিত প্রথা ভেঙে কালুকে নিয়ে এক ভিন্নধর্মী উপমা টানলেন। তারা বললেন, ​’আব্দুল মুমিন কালু সাধুত্বের প্রতিচ্ছবি। অল্প বয়সেই তিনি আমাদের এলাকার সম্পত্তি নন বরং সম্পদে পরিণত হয়েছেন। সম্পদ কেনা যায় কিন্তু এমন মানুষ লাখের মধ্যেও একটা পাওয়া দুস্কর, যিনি নিজের ভালো কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আজ আমাদের সেই সম্পদ প্রবাসে চলে যাচ্ছেন। এই শূন্যতা শুধু দৌলতপুর গ্রামের নয়, এই অঞ্চলেরও।’
​বক্তারা তাদের বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আব্দুল মুমিন কালু স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হলেও, দৌলতপুরের প্রতিটি সেবাধর্মী কাজের প্রয়োজন তাঁর কানে পৌঁছাবে এবং তিনি সুদূর প্রবাস থেকেও এই মাটির কল্যাণে নিজেকে যুক্ত রাখবেন।’

অনুষ্ঠানের একেবারে শেষে বক্তব্য রাখেন সংবর্ধিত ব্যক্তি আব্দুল মুমিন কালু। বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি। দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠে তাঁর। তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করার সাধ্য আমার নেই। অতীত ও বর্তমানের ন্যায় আগামিতেও প্রিয় দৌলতপুর গ্রাম এলাকার মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে সবার আগে পাশে দাড়াবো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন সহিসালামতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে পারি।’

আব্দুল মুমিন কালুর বক্তব্যের পূবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আরব খান, সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস আলী, পরিষদের মেম্বার শফিক আহমদ পিয়ার, লুৎফুর রহমান ও নজরুল ইসলাম আজাদ, সাবেক মেম্বার আলী আকবর মিলন, সামছুদ্দিন, দিপালী সংঘ হাবড়া বাজারের সভাপতি হাজী আরিফ উল্লাহ সিতাব, অর্থ সম্পাদক ফরহাদ আহমদ, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. বিভাংশু গুন বিভু, দৌলতপুর দারুসসুন্নাহ ইসলামিয়া মাদ্রাসার সহসভাপতি মকসুদ আহমদ, চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম।

আরও বক্তব্য রাখেন দৌলতপুর গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি হারিছ আলী, সংগঠক আশিকুর রহমান রানা, ইকবাল হোসেন, হাসান আহমদ, নাজমুল ইসলাম খান, এসপি সেবু, হোসাইন আহমদ ইমলাক, দৌলতপুর পশ্চিমপাড়া তরুণ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাগর মাহমুদ।

তাদের বক্তব্যের মধ্যেও উঠে আসে আব্দুল মুমিন কালুর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং মানুষের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ দরদ ও ভালোবাসার গল্প।

শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ক্বারী ইলিয়াসুর রহমান, স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজাউল করিম রাজু এবং শেষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন দৌলতপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ শাহজাহান।

শেষে সংবর্ধিত ব্যক্তি আব্দুল মুমিন কালুর হাতে যখন একে একে দৌলতপুর গ্রামবাসী, দিপালী সংঘ হাবড়া বাজার, চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটি, দৌলতপুর যুব সমাজ, দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস আলী, দৌলতপুর পশ্চিমপাড়া তরুণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা ও বাবুল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হল, তখন এই স্মারকগুলো যেন প্রতীকীভাবে সেই ভালোবাসার বাঁধনকেই তুলে ধরল, যা কোনো ভৌগোলিক দূরত্ব দিয়ে ছিন্ন করা সম্ভব নয়।

এ সম্পর্কিত আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত