আব্বাস হোসেন ইমরান :: শৈশব থেকে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আসা এবং প্রবাসে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েও জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের নয়া সৎপুর গ্রামের লুকসানা বেগম (৩৬)। চরম সংকটের মধ্যদিয়ে দিন পার করে আসার পর বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। তাঁর এই অদম্য মানসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ গত ৯ ডিসেম্বর ‘বেগম রোকেয়া দিবসে’ তাঁকে প্রদান করা হয়েছে ‘অদম্য নারী সম্মাননা’।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে তাঁর বাবা পরিবার ছেড়ে চলে গেলে লুকসানার জীবনে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। এরপর, স্বামীর মৃত্যু তাঁকে আরও অসহায় করে তোলে। জীবিকার সন্ধানে নিরুপায় হয়ে লুকসানা ধারদেনা করে ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে পাড়ি জমান। কিন্তু, সেখানে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক। অমানবিক পরিশ্রম, খাবার বঞ্চনা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তিনি দেশে ফিরতে বাধ্য হন। দেশে ফেরে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল এবং ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েন।
ঠিক ওই সময় এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হন। ব্র্যাক প্রথমে তাঁকে নিবিড় কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করে, যা তাঁর মানসিক মনোবল ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। পরবর্তীতে তিনি উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও আর্থিক সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ব্র্যাকের উপকরণ সহায়তায় লুকসানা বেগম নিজ গ্রামে একটি মুদি দোকান চালু করেন।
এর মাধ্যমে পরিত্যাগ, ক্ষতি ও শোষণে ভরা জীবনের পথ পেরিয়ে লুকসানা বেগম ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন একজন দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর নারী। তাঁর মুদি দোকান কেবল আয়ের উৎস নয়, এটি তাঁর মর্যাদা, শক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠে।
তাই, এবারের রোকেয়া দিবসে ’নির্যাতনের দুঃস্বপ্ন মুছে জীবন সংগ্রামে জয়ী’ লুকসানা বেগমের হাতেই উঠে ‘অদম্য নারী সম্মাননা’ স্মারক। গত ৯ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে কুলসুম রুবির সভাপতিত্বে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বদরুন্নাহারের সঞ্চালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে লুকসানা বেগম ছাড়াও স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখায় সফল জননী হিসেবে বাসন্তী রানী দাশ, শিক্ষা ও চাকরী ক্ষেত্রে শিক্ষিক বিলকিস বেগম এবং সমাজ উন্নয়ন ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বেগম স্বপ্না শাহিন এই সম্মাননা পান।
লুকসানা বেগমের গল্প হাজারো প্রবাসফেরত নারীর কাছে অনুপ্রেরণা, যারা প্রতিকূলতাকে জয় করে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।
কথা হলে লুকসানা বেগম জানান, ‘আমি এখন আমার পরিবারের দেখভাল করছি এবং ভবিষ্যতে দোকানের পরিসর আরও বৃদ্ধি করারও স্বপ্ন দেখছি।’













