সাইফুল ইসলাম বেগ :: রাজনীতি, সমাজ-সংসার। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। স্ত্রী, দুই ছেলে আর একমাত্র মেয়েকে নিয়েই রাজধানীর বনানীর ‘সিলেট হাউজে’ থাকতেন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম. ইলিয়াস আলী। আর মায়ের প্রতি টান পড়লেই যখন-তখন ছুটতেন গ্রামের বাড়ি, সিলেটের বিশ্বনাথের ‘রামধানায়’। তাঁর উপস্থিতি রূপ নিতো উৎসবে। ভিড় জমাতেন কর্মী-সমর্থক আর সাধারণ মানুষেরা। পরিবারে তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা। মধ্যমণি। হাসি-আনন্দের প্রতীক। কিন্তু কে জানতো ইলিয়াসের জন্য অপেক্ষা করছে নিষ্ঠুর নিয়তি।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন ইলিয়াস আলী। সেই থেকে ইলিয়াসের সাথে হারিয়ে যায় পরিবারের হাসি-আনন্দ। বিষাদে কাটে সময়। অশ্রুসিক্ত নয়নে বছরের পর বছর মা আর স্ত্রী-সন্তানের অনন্ত অপেক্ষা। কবে ফিরবেন তিনি। এভাবে যুগ পেরুলেও সন্ধান মেলেনি আর। ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক বন্দিশালা থেকে গুম হওয়া অনেকে ফিরলেও হদিস মিলছে না তার। কান্না থামেনি ইলিয়াস আলী পরিবারের।
সম্প্রতি গুম হওয়া একাধিক ব্যক্তি ফিরে আসার খবর জানতে পেরে ইলিয়াস আলীর স্নেহময়ী মা সূর্যবান বিবি কান্না জড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে জানান, ‘খোঁজতে গিয়ে অনেককেই পাওয়া গেছে। আমার ছেলেকে এখনও পাওয়া যায়নি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কোনো মানুষের কাছে আর ছেলের সন্ধান চাইবো না। আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছি। তিনি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিবেন।’
ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস জানান, ‘আজ দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাবাকে ফিরে পাবার আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি আমরা। বাবার জন্যে প্রতিনিয়ত গোপনে কান্না করে আমার আদরের ছোট বোনটি। সে কাউকে কিছু বলে না। আমাদের কিছুই করার থাকে না তখন। পরিবারের কেউ কারো সাথে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতেও পারি না। সে শক্তি আমাদের নেই। বাবাহীন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত আমাদের পুরো পরিবার। আল্লাহ-ই একমাত্র ভরসা। আমরা নিরাশ হইনি। আশাবাদী, তিনিই বাবাকে ফিরিয়ে দেবেন।’