পান্না কায়সার প্রেরণার বাতিঘর হয়ে সবার হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা খেলাঘরের শিশুরা, সর্বস্তরের মানুষ চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন শহীদজায়া পান্না কায়সারকে। কান্নাভেজা চোখ ছিল স্বজনদের।
রোববার লেখক, শিশু সংগঠক, শহীদজায়া পান্না কায়সারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। শহীদ মিনারে এ সময় পান্না কায়সারের মরদেহের সামনে উপস্থিত ছিলেন মেয়ে শমী কায়সার, ছেলে অমিতাভ কায়সারসহ পরিবারের সদস্যরা।
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদজায়া পান্না কায়সারের মরদেহ সকাল ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। এ সময় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হলে সেখানে প্রথমে শ্রদ্ধা জানায় তার তৈরি শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’। কেন্দ্রীয় খেলাঘরের পক্ষে স্যালুট জানিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহে খেলাঘরের পতাকা দিয়ে আবৃত করা হয়।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, খেলাঘরের বিভিন্ন শাখা, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, খেলাঘরের ঢাকা মহানগর কমিটি, বরগুনা খেলাঘর, অর্ণব খেলাঘর আসর মানিকনগরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক কমিটি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, প্রেসিডেন্ট আইএসপিএ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটি, মণি সিংহ কেন্দ্র ট্রাস্ট, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদ, সংবাদ পরিবার, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নাট্যজন শংকর সাওজাল, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছায়ানট, ঋষিজ শিল্পগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, প্রজন্ম একাত্তর, বাংলাদেশ আওয়ামী তথ্য-প্রযুক্তি লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, ’৭১ ফাউন্ডেশনসহ আরও অনেক সংগঠন ও ব্যক্তিরা একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদজায়া পান্না কায়সার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি আজীবন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে ছিলেন।
শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার মতো একজন অমায়িক ও আদর্শবান মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। কাজের মধ্য দিয়ে তিনি জাতিকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তার সবকিছু ছিল মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নিবেদিত। তিনি আমাদের দেশ, দেশের মানুষকে গড়তে সবসময় কাজ করেছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সবার ভালোবাসা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ও গুণাবলির কারণে। দুটি বিষয়ে তার অনবদ্য অবদান রয়েছে। একটি স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র, সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে পটভূমি তৈরিতে শহীদজায়া পান্না কায়সার মুখ্য ভূমিকা, অন্যতম নেত্রীস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, তিনি অনেক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অনমনীয় অবস্থা থেকে সরে আসেননি। সারা দেশের শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ে তোলা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব। পান্না কায়সার সেই দায়িত্ব সারা জীবন সুন্দরভাবে পালন করে গেছেন।’